পৃথিবীর প্রতিটি জনস্তরে শুরু হয়েছে জাতিসত্তার অন্বেষণ৷ নিজের ইতিহাসকে বিজয়ী জনস্রোতের পদচাপে তলিয়ে যাওয়া বিস্মৃতির অতল থেকে তুলে এনে বর্তমানের জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে সারা বিশ্বেই অস্থির পদসঞ্চালনের কম্পন তুলেছে ভূমিপুত্ররা৷ জনজাতি প্রবাহের মহাসমুদ্র এই ভারতবর্ষেও নানা প্রান্তে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তারই প্রতিচ্ছবি৷ আত্মপ্রতিষ্ঠার তাগিদে বাংলার উত্তরে এবং উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে অস্থিরতার আগুন বারংবার বিঘ্নিত করেছে শান্তির বাতাবরণ৷ সব আন্দোলনই যে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী তা নয়, কিন্তু আমাদের দেশের সমৃদ্ধিতে বাইরের যে সমস্ত অশুভ শক্তির স্বার্থে আঘাত লাগে তারা এই অশান্তির সুযোগ নিয়ে হিংসার অসাধু মদত জুগিয়ে চলে৷ যার ফলে প্রবল ব্যাহত হয় লোকায়ত জীবন ও সংসৃকতি এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকারগুলি৷ জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারা থেকে ক্রমে দূরে সরে যেতে থাকে সেই সব উপদ্রুত এলাকাগুলি৷
বিভিন্ন সময়ে নানা চুক্তির মাধ্যমে আপাত শান্তি হয়তো ক্রয় করা গেছে, তবে এই শান্তি কত দিন স্থায়ী হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই৷ কারণ এই হিংসা ও বিচ্ছিন্নতার পেছনে যে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সমীকরণগুলি সক্রিয় ভুমিকা নেয়, সেগুলি ও তার সঙ্গে জনসত্তাগুলির মানসিক অবস্থান বা ভাবাবেগকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলস্বরূপ মূল সমস্যাগুলি সবসময়ই অনালোচিত ও অমীমাংসিত থেকে যায়৷ অথচ রাজধানীতে বসে থাকা শাসকের কখনই হৃদয়ঙ্গম হয় না যে পাহাড় ও সমতলের ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিন্যাস সম্পূর্ণ পৃথক৷ তাদের ইতিহাসের উৎসভূমিও আলাদা৷
ইতিহাস-রাজনীতি-সমাজবিজ্ঞানের বরিষ্ঠ গবেষক ড. সৌমেন নাগ তাঁর অনুসন্ধিৎসু কলম নিয়ে বারবার ছুটে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গও উত্তর-পূর্ব ভারতের নানা প্রান্তে৷ এই গ্রন্থের একের পর এক অধ্যায়ে তিনি ক্রমাণ্বয়ে আবিষ্কার করেছেন, এই বিচ্ছিন্নতার উৎস সন্ধান করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন স্থানীয় উপেক্ষিত ইতিহাসের একনিষ্ঠ অধ্যয়ন ও মূল্যায়ন৷ তার মধ্য দিয়েই পরিস্ফুট হয়ে ওঠে সেখানকার প্রাচীন জনজাতির ঐতিহ্য, সংসৃকতি ও ভাবাবেগ৷ এযাবৎ পাঠ্যপুস্তকে স্থান না পাওয়া উত্তরবঙ্গীয় তথা উত্তর-পূর্ব ভারতীয় সেই গৌরবময় ইতিহাস যতক্ষণ নতুন প্রজন্মের সামনে উন্মোচিত না হচ্ছে ততক্ষণ বিচ্ছিন্নতার ক্রমলালিত প্রাচীন ক্ষত নিরাময়ের পথ নির্ধারণ করা শাসকের হাজার সদিচ্ছা সত্ত্বেও সম্ভব হবে না৷
আইএসবিএন: | ৯৭৮-৮১-৯৬১৩৪৫-৯-৪ |
প্রকাশের তারিখ: | এপ্রিল, ২০২৩ |
পৃষ্ঠা: | ৩৮৪ |
ভাষা: | বাংলা |
বাঁধাই: | হার্ডবোর্ড |