গ্রামীণ বাংলার অন্তর্নিহিত সম্পদ তার লোকসংস্কৃতি। বাংলার প্রান্তিক উত্তরের সেই অতীত ঐতিহ্যকে বিস্মৃতি ও উপেক্ষার অন্ধকার থেকে পুনরুজ্জীবিত করবার পথিকৃৎ ছিলেন আব্বাসউদ্দীন। যা এককালে মাঠের রাখাল-চাষি বা নদীর জেলে-মাঝির উদাসী প্রাণের সুর হয়ে ভেসে বেড়াত উত্তরের আকাশে বাতাসে, তাকে হারিয়ে যেতে দেননি আব্বাসউদ্দীন। অনাবিল প্রকৃতির কোলে বড় হয়ে ওঠা এই সহজাত শিল্পীর গলায় বিধাতা ঢেলে দিয়েছিলেন সেই সুর। অজগাঁয়ের সেই অখ্যাত সব লোকগীতিকে আব্বাসউদ্দীন সযতনে অবিকৃতভাবে পৌঁছে দিয়েছিলেন সংগীতপ্রেমীদের আলোকিত দুনিয়ায়। যা ছিল প্রকৃতই অভিনব এবং অভাবনীয়। কাজী নজরুল ইসলামের স্নেহধন্য আব্বাসউদ্দীনকে মানুষ তাই মনে রেখেছে পল্লীগীতি সম্রাট হিসেবেই। কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে জীবন শুরু করে কলকাতায় খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছনো পর্যন্ত সময় অর্থাৎ এই মহান শিল্পীর নাতিদীর্ঘ জীবনের পাঁচ ভাগের চার ভাগই অতিবাহিত হয়েছে এপার বাংলায়। একজন শিল্পীকে যদিও কোনও দেশের সীমা্রেখায় বেঁধে রাখা যায় না, কিন্তু আব্বাসউদ্দীন তাঁর বাল্যভূমির পিছিয়ে থাকা দরিদ্র মানুষগুলির কথা কখনও ভোলেননি, সেখানকার শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নতির প্রচেষ্টা সর্বতোভাবে করে গিয়ে্ছেন। তেমনই একজন শিল্পীর যদিও কোনও ধর্ম-বর্ণ-গোত্র দিয়ে পরিচয় হয় না, তবু একজন প্রকৃত ধর্মপ্রাণ মানুষ যে কখনো ধর্মান্ধ হতে পারেন না, তিনি যে পরধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল হন, আব্বাসউদ্দীন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। আজকের চরম অসহিষ্ণুতা এবং ঐতিহ্য বিকৃতির যুগে সামগ্রিক আব্বাসউদ্দীনকে জানাটা তাই নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আইএসবিএন: | ৯৭৮-৮১-৯৬৩৩২৪-৮-৮ |
প্রকাশের তারিখ: | নভেম্বর, ২০২৩ |
পৃষ্ঠা: | ২৮০ |
ভাষা: | বাংলা |
বাঁধাই: | হার্ডবোর্ড |